The Daily Adin Logo
অপরাধ
নিজস্ব প্রতিবেদক

বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫

আপডেট: বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫

এসি ল্যান্ডের ছুটির পর অফিসের ‘মালিক’ সজীব

এসি ল্যান্ডের ছুটির পর অফিসের ‘মালিক’ সজীব

সাংবাদিক দেখে দিলেন ভোঁ দৌড়

মিরপুর সহকারী কমিশনার (ভূমি) দারুসসালাম অফিস। গত সোমবার রাত তখন সাড়ে ৮টা। খবর এলো ভেতরে অফিস চলছে। খোঁজ নিতেই জানা গেল শুধু সোমবার নয়, সপ্তাহের পাঁচ দিনই চলে এমন রাতের বেলার অফিস। এমনকি মাঝে মাঝে শুক্র-শনিবারও চলে ‘ওভারটাইম’। আর এই অফিসের রাতের মালিক আওয়ামী যুবলীগের পলাতক নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমান সজীব। অথচ তিনি এই অফিসের কেউই নন। তবে সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি দেন ভোঁ দৌড়।
জানা যায়, কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ থানার আওয়ামী যুবলীগের সক্রিয় নেতা ও ৫ আগস্টের একাধিক হামলার অর্থ যোগানদাতা এই আব্দুল্লাহ আল নোমান সজীব। আওয়ামী লীগ আমলে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে তৎকালীন সময়ে দারুস সালাম থানা ভূমি অফিসের নিয়ন্ত্রণ নেন তিনি। ২০২৪-এর ৫ আগস্ট পট পরিবর্তন হলেও এখনো অফিসটিতে চলছে ‘সজীব রাজ’। তাকে গুরু মেনে চলা কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতায় পুরোদমে অবৈধ কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে সজীব সিন্ডিকেট। তার সিন্ডিকেটে ভূমি অফিসের গেটের অপরপাশের মুদি ও কনফেকশনারির দোকানদার নাজমুল, সাদ্দামসহ ৬ থেকে ৭ জন যুক্ত আছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

মিরপুর সহকারী কমিশনার (ভূমি) দারুস সালাম অফিসের জমির সুরক্ষিত কাগজপত্রের প্রায় পুরোটাই সজীব সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে বলে জানা গেছে। সেই সুবাদে মিরপুর ডিভিশনে জমি, প্লট ও ফ্ল্যাট মালিকদের আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে এই সজীব সিন্ডিকেট।

বিগত সরকারের সময় থেকেই দলীয় প্রভাব বিস্তার করে সজীব মিরপুর জোনের দারুস সালাম ভূমি অফিসের বিভিন্ন সরকারি গোপন নথি ও দলিলাদি এদিক-সেদিক করতেন। ৫ আগস্টের পর দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলেও ‘স্বমহিমায়’ রয়ে গেছে সজীব ও তার লোকজন।

ভূমি অফিসের কোনো পদে নিয়োগপ্রাপ্ত না হয়েও অত্র এলাকার জমি, ফ্ল্যাট ও প্লট মালিকদের জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন সজীব। সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের সমস্ত কাগজপত্র, রেকর্ড রুমসহ সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ তার হাতে।

মনোহরগঞ্জ থানায় খোঁজ নিয়েও জানা গেছে সজীবের নামে একাধিক মামলার তথ্য। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুঠোফোনে এদিনকে জানান, যুবলীগ নেতা সজীবের নামে একাধিক মামলা রয়েছে। বর্তমানে সে পলাতক।

সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) রাতে নির্ভরযোগ্য সূত্রে নিশ্চিত হয়ে ভূমি অফিসে গিয়ে দেখা যায়, এসি ল্যান্ডের অফিসের গেটে দারোয়ান পাহারা দিচ্ছেন। তার কাছে ভেতরে কেউ আছে কি না জানতে চাওয়া হলে তার সোজাসাপ্টা জবাব, ‘ ভেতরে কেউ নাই!’

তবে এই প্রতিবেদক স্থানীয় লোকজন নিয়ে ভেতরে গিয়ে দেখতে পান, অফিসে কয়েকজন বসে মিটিং করছেন। লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে সজীব দৌড়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও সিন্ডিকেটের কয়েকজনকে পাওয়া যায়। তারা স্বীকার করেন, সজীব এখানেই ছিলেন। সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে সটকে পড়েছেন।
এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে আব্দুল্লাহ আল নোমান সজীবের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এ ঘটনা জানাজানি হলে তড়িঘড়ি করে অফিসে উপস্থিত হন এই অফিসেরই ভারপ্রাপ্ত ভূমি কর্মকর্তা গরিব শাহ। তিনি সহকারী কমিশনারের (এসি ল্যান্ড) সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।

এ বিষয়ে জানতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. হাসানুর রহমান পলাশ মুঠোফোনে এদিন প্রতিবেদককে বলেন, ‘ভাই, আমি এখানে ৪ চার মাস হলো আসছি। সজীব যে যুবলীগের নেতা, সেটা আমি জানতাম না। আমি অফিস থেকে চলে আসার পর অফিসে কী হয়, সে সম্পর্কে আমি অবগত নই। তবে আমার আগে এখানে যিনি ছিলেন তিনি ছাত্রলীগের পোস্টেড নেতা ছিলেন বলে শুনেছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘আপনার অভিযোগ সত্য হলে  অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’

সজীব ভূমি অফিসের কোনো পদে না থেকেও দিনেরাতে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অনুপস্থিতিতে তার অফিস রুমে ঢোকার সুযোগ কীভাবে পান, জানতে চাইলে এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি এসিল্যান্ড মো. হাসানুর রহমান (পলাশ)।

তবে এসব বিষয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে তিনি সাংবাদিকদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মো. সাইদুল ইসলাম সাজু
প্রকাশক : মো. সাইদুল ইসলাম সাজু

সম্পাদক কর্তৃক বিসমিল্লাহ্ প্রিন্টিং প্রেস, ২১৯ ফকিরাপুল ১ম গলি, মতিঝিল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও হাউজ নং ৯, রোড ১৭, ব্লক ডি, বনানী, ঢাকা-১২১৭ থেকে প্রকাশিত।

যোগাযোগ করুন

টাওয়ার-এ (২য় তলা), হাউস-১৩, রোড-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩।

টেলিফোন : ০৯৬৩৯১০১৯২৩

ইমেইল : dailyadinbd@gmail.com

আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া

facebookxyoutubetiktok

© স্বত্ব ২০২৫, দৈনিক এদিন

Design & Developed byBongosoft Ltd.